জাতীয় দল পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ১০ কোচ।গ্রাফিকস: প্রথম আলো

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের কোচেরা কে কত টাকা বেতন পান

কার্লো আনচেলত্তির ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হওয়াটাই বড় খবর। ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য প্রায় সব শিরোপা জেতা এই ইতালিয়ান দায়িত্ব নিচ্ছেন এমন এক দেশের, যারা সচরাচর বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয় না। প্রচলিত ধারা ভেঙে সিবিএফ (কনফেডারেশন অব ব্রাজিল ফুটবল) আনচেলত্তিকে শুধু দায়িত্বই দিচ্ছে না, আর্থিকভাবে সুযোগ–সুবিধাও দিতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের অন্য কোচদের চেয়ে বেশি।

ব্রাজিলের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্যের জন্য কোচের পেছনে টাকা ঢালে আরও অনেক দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানির মতো দেশগুলো তাদের জাতীয় দলের কোচকে দেয় বিপুল সুযোগ–সুবিধা, সঙ্গে থাকে পারফরম্যান্স বোনাস। নির্দিষ্ট সাফল্য পেলে আরও টাকা।

ব্রাজিলের গ্লোবোস্পোর্ত বলছে, আনচেলত্তিকে বছরে ১ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলারের মতো বেতন দেবে সিবিএফ। অর্থ্যাৎ, প্রতি মাসে সোয়া নয় লাখ ডলারের মতো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় মাসে ১১ কোটি টাকার বেশি। বেতনের বাইরে রিও ডি জেনিরোতে বসবাসের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট আর যাতায়াতের জন্য জেট বিমানও পাবেন।

আনচেলত্তির পেছনে ব্রাজিলের এত টাকা খরচের একটাই কারণ—দুই দশক ধরে না জেতা বিশ্বকাপ এনে দেওয়া। ২০২৬ সালে সেটা এনে দিলে পারফরম্যান্স বোনাসও দেওয়া হবে, পরিমাণ—৫৬ লাখ মার্কিন ডলার।

ব্রাজিলের চাকরিতে ব্যক্তিগতভাবে ৬৫ বছর বয়সী আনচেলত্তির ব্যস্ততা কমবে। ক্লাব ফুটবলে কোনো কোনো মাসে ৮–৯টি ম্যাচও খেলতে হয়। যেমন আনচেলত্তির বর্তমান দল রিয়াল মাদ্রিদ ২০২৪-২৫ মৌসুমে এরই মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলে ফেলেছে ৬৩টি।

ম্যাচকেন্দ্রিক এই তুমুল ব্যস্ততা কমে এলেও আনচেলত্তিকে সামলাতে হবে একটা গোটা দেশের প্রত্যাশার চাপ, যে দেশে ফুটবলটাই ধ্যানজ্ঞান। আর পুরো দেশের প্রত্যাশার চাপ, দীর্ঘ মেয়াদে শিরোপা–খরা ও সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনাতেই জাতীয় দলের কোচরা কাজ কম হলেও ভালো পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন।

ব্রাজিলের চেয়ে বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ট্রফি নেই ইংল্যান্ডের। ইয়াহু স্পোর্টসের তথ্য বলছে, ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) টমাস টুখেলকে বছরে ৬৭ লাখ মার্কিন ডলার বেতন দিচ্ছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮১ কোটি টাকা। ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপ না জেতা ইংল্যান্ড টুখেলের সঙ্গে চুক্তি করেছে ২০২৬ পর্যন্ত।

বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার চাপের দিক থেকে ইংল্যান্ডের ধারেকাছেও নেই যুক্তরাষ্ট্র। তবে উত্তর আমেরিকার দেশটি তাদের কোচকে দিচ্ছে ইংল্যান্ডের কাছাকাছি বেতনই।

ইএসপিএনের খবর অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের কোচ মরিসিও পচেত্তিনো ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের ঘরে বেতন পেয়ে থাকেন। কখনো বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল না খেললেও ২০২৬ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে পচেত্তিনোর কাছে বড় কিছুই চাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের। আর বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে কোচের পেছনে বড় অঙ্ক খরচের সামর্থ্য তো তাদের আছেই।

অর্থনীতির আকার বিবেচনায় জার্মানির সামর্থ্যও ভালোই। দলটি ইউলিয়ান নাগলসমানকে বেতন দেয় বছরে প্রায় ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার। এই অর্থ অবশ্য পূর্ববর্তী কোচ হান্সি ফ্লিকের চেয়ে কম। বর্তমান বার্সেলোনা কোচ জার্মানি জাতীয় দলে থাকতে প্রায় ৭৩ লাখ ডলার বেতন পেতেন।

আন্তর্জাতিক ফুটবল কোচদের বেতনের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে পর্তুগালও। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দেশ তাদের প্রধান কোচ রবার্তো মার্তিনেজকে দেয় ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার। তুলনায় ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশমের বেতনই কমই মনে হতে পারে কারও কারও। ২০১৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন আর ২০২২ বিশ্বকাপে রানার্সআপ করানো এই ফরাসি কোচ ২০২৪ সালে ৪১ লাখ মার্কিন ডলার বেতন পেতেন বলে জানিয়েছিল বিইনস্পোর্টস।

উরুগুয়ে তাদের কোচ মার্সেলো বিয়েলসাকেও দেয় কাছাকাছি অঙ্কের অর্থ। আর্জেন্টাইন কোচের জন্য উরুগুয়ে বছরে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করে বলে জানিয়েছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম বুয়েনস এইরেস টাইমস। চিলি তাদের কোচ রিকার্ডো গার্সিয়াকে দেয় ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার।

মজার বিষয় হচ্ছে, গত পাঁচ বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় সবচেয়ে সফল যিনি, সেই লিওনেল স্কালোনির বেতন ৩০ লাখের কম। লাতিন আমেরিকাভিত্তিক বহুজাতিক ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম বোলাভিআইপিএর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ বিশ্বকাপ এবং ২০২১ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকাজয়ী আর্জেন্টাইন কোচ বছরে পান ২৬ লাখ মার্কিন ডলার।

এ ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে যুক্ত হওয়ার আগে কোচিংয়ে অভিজ্ঞতার অভাব এবং আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অবস্থারও ভূমিকা থাকতে পারে।
স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের বাৎসরিক বেতন অবশ্য স্কালোনির চেয়েও কম—২০ লাখ মার্কিন ডলার।