কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আশ্রয় (রিফিউজি) আবেদন রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালে মোট ২০ হাজার ২৪৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী আশ্রয় (রিফিউজি) আবেদন করেছেন। এ সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আর ২০১৯ সালের তুলনায় ছয় গুণ বেশি।
, ২০২৫ সালেও এই সংখ্যা (২০২৪ সালের) অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের (২০২৫) প্রথম তিন মাসেই ৫ হাজার ৫০০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আশ্রয় (রিফিউজি) আবেদন করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।
এমন এক সময়ে এই সংখ্যা বাড়ছে, যখন কানাডা সরকার শিক্ষার্থীদের স্টাডি পারমিট ইস্যু ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনছে এবং প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে অস্থায়ী শ্রমিক ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের নিচে আনা হবে। বর্তমানে এই হার ৭ শতাংশ।
কেন বাড়ছে এই আশ্রয় আবেদন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থায়ী আবাসনের পথগুলো সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন বিকল্প হিসেবে আশ্রয়প্রক্রিয়া বেছে নিচ্ছেন। ওয়ার্ক পারমিট (কাজের অনুমতিপত্র) ও স্পাউসের পারমিট পাওয়ার নিয়ম কঠিন হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। অনেক প্রতারণামূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (diploma mills) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ঠকিয়ে নিম্নমানের ডিপ্লোমা দিচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে চাকরি বা পিআরের (স্থায়ী আবাসন) কাজে আসছে না।
কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ—
যাঁরা পড়াশোনা শেষ করেছেন এবং পিআর-এর আর কোনো উপায় না পেয়ে যাঁরা রিফিউজি আবেদন করেছেন বা করবেন, তাঁদের মাথায় রাখতে হবে, ‘বাংলাদেশে আপনার জীবন হুমকির সম্মুখীন’ এটা প্রমাণ করতে হবে। কানাডা এখন হাজারো মিথ্যা অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) আবেদনের ফাইল বাতিল করে দিচ্ছে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করলে তা আইনি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ জন্য অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যাঁরা এখনো পড়ছেন, তাঁরা যেন অবশ্যই কানাডায় থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি ও অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করেন এবং নতুন পিআরগুলো সম্পর্কে আপডেট থাকেন।
ভবিষ্যতে কানাডায় আসতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জন্য পরামর্শ—
শুধু কানাডা আসার জন্য নিম্নমানের কলেজে ভর্তির চিন্তা করবেন না। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে আসা উচিত। কানাডা সরকার এখন শিক্ষার্থী নির্বাচনপ্রক্রিয়া কঠোর করেছে—যেমন স্টাডি পারমিট লিমিট, ভেরিফায়েবল লেটার অব অ্যাডমিশন, ফান্ড প্রমাণ ইত্যাদি। ভবিষ্যতে পিআর পাওয়ার জন্য আগে থেকেই যোগ্য কোর্স ও অভিজ্ঞতা অর্জন করার দিকে মনোযোগ দিন।
শেষ কথা
কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থা এখন অনেক কঠিন ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ। কাজেই যে কেউ কানাডায় আসতে চাইলে তাঁকে সঠিক তথ্য, উপযুক্ত পরিকল্পনা ও বাস্তবমুখী চিন্তা নিয়ে এগোতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে আশ্রয় আবেদন করলে কানাডায় থাকার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয়ে মনে রাখবেন, কানাডার সঙ্গে ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত সব তথ্য আদান–প্রদান করে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য। তাই কানাডা থেকে কোনো কারণে যদি কেউ নিষিদ্ধ (ব্যান্ড) হয়ে যান, তাহলে বাকি চারটি দেশের দরজা তাঁর জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।