সড়কের ফুটপাতে লাগানো সোনালুগাছে ফুটেছে ফুল, ঝরে পড়ে আছে মাটিতে। আজ সোমবার তোলাছবি: প্রথম আলো

সোনালু-জারুলে সড়কে রঙের মেলা, যেখানে ‘দূর হয় ক্লান্তি, মন হয় ভালো’

দূর থেকে তাকালেই মনে হয়—পথজুড়ে ছড়িয়ে আছে রঙিন ফুলের ঢেউ। কোথাও সোনালি ঝলক, কোথাও আবার বেগুনির কোমল ছায়া। বাতাস এলেই দুলছে, ঝরছে। গ্রীষ্মের খরতাপেও এখানে হেঁটে গেলে গরমটা যেন আর গায়ে লাগে না।

রাজশাহী নগরের আলিফ-লাম-মীম ভাটা থেকে শুরু হয়ে চৌদ্দপাই বিহাস পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক এখন ফুলের ‘অরণ্য’। সোনালু, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, কাঞ্চন আর আইল্যান্ডজুড়ে পাম, রঙ্গন, কাঠগোলাপের মিলনমেলা এখানে প্রতিদিন পথিকের মন ভরিয়ে দিচ্ছে।

সম্প্রতি ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে ফুটে আছে সোনালু ও জারুল। অপেক্ষাকৃত কম ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। সবুজ পাতার আড়ালে শোভা পাচ্ছে সোনালু। আর সবুজ পাতা মাড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে হেলে আছে জারুল। রাস্তার দুই পাশে ফুটপাতে লাগানো গাছে ফুলের এমন ‘অরণ্য’ যে কাউকে আকৃষ্ট করে। ফুটপাতে ছড়িয়ে আছে সোনালু ফুল। সেটা মাড়িয়েই অনেকে হেঁটে চলেছেন গন্তব্যে।

এক তরুণ বলেন, এমন ফুল দেখে থেমে গিয়ে ক্যামেরাবন্দী করতে হলো। এ তো ফুলের অরণ্য। এমন সোনালু ফুল প্রথম চোখে পড়ল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রত্না আক্তার প্রথমবার এসেছেন এই সড়কে। তিনি বলেন, ‘দূর থেকে দেখে থেমে গেলাম। ছবি না তুলে পারলাম না। ফুলগুলো যেন ডেকে নিচ্ছে।’

বিকেলে দেখা গেল, কিছু পথচারী গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউবা বসে আছেন চুপচাপ। রোদ-ঝলমলে দুপুরেও কেউ কেউ গাড়ি থামিয়ে নিচ্ছেন কেবল এই ফুল দেখার জন্য। একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মী বিলাল মিয়া বলেন, ‘এ রাস্তা আমার গন্তব্য নয়, তবু সুযোগ পেলেই এই পথ দিয়ে যাই। ফুলগুলো ডাকে, মন ভালো হয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে গেলেই সকল ক্লান্তি যেন কীভাবে দূর হয়ে যায়।’

এই ফুলেল পরিবেশ শুধু পথিক বা দর্শনার্থীকেই নয়, মুগ্ধ করছে স্থানীয়দেরও। স্থানীয় আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তি বললেন, গাছগুলোর বয়স তিন-চার বছর। ফুলের কারণে রাস্তার চিত্রই পাল্টে গেছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে সড়কটিতে পরিকল্পিতভাবে দুই পাশে ফুটপাতে প্রায় ১০ হাজার গাছ লাগানো হয়। প্রতি কিলোমিটারে আলাদা প্রজাতির ফুলগাছ। আইল্যান্ডজুড়ে রোপণ করা হয়েছে নানা জাতের শোভাবর্ধক বৃক্ষ। বর্তমানে সব কটি গাছ টিকে আছে এবং সমানভাবে বেড়েছে। গ্রীষ্মে সোনালু, বর্ষায় জারুল, শীতে কাঞ্চন—প্রতিটি ঋতু এখানে আলাদা রূপে ধরা দেয়।

সড়কটিতে বসানো হয়েছে ৫৩০টি এলইডি বাতি। রাতের আলোয় ফুলগুলো দেখে মনে হয়, এ যেন এক স্বপ্নরাজ্য। এই সড়ক এখন শুধু যাতায়াতের রাস্তা নয়, ফুলপ্রেমী মানুষের এক প্রিয় গন্তব্যও। নগরের এই রঙিন পথ যেন গরমের মধ্যেও একটুকরা শান্তি এনে দিয়েছে শহরবাসীর জীবনে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা সৈয়দ মাহামুদ উল ইসলাম বলেন, ওই রাস্তার গাছগুলো ২০১৯ সালের দিকে লাগানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সড়কটির বিভিন্ন অংশে শুধু দুই পাশের ফুটপাতে দুই হাজারের বেশি বৃক্ষরোপণ করা হয়। এই গাছগুলোর প্রায় সব কটিই টিকে আছে এবং প্রায় সমানভাবে বড় হয়েছে। গাছগুলো কয়েক বছর ধরেই ফুল ও ছায়া দিচ্ছে। এবার গ্রীষ্মে বেশি ফুল ফুটেছে। শুধু এই সড়ক নয়, নগরের আরও অনেক সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ফুল ফুটেছে।