Advertisement
  • হোম
  • বিনোদন
  • ‘জবাইয়ের হুমকি কোনো সমাজেই গ্রহণযোগ্য নয়’, ফেসবুকে...

‘জবাইয়ের হুমকি কোনো সমাজেই গ্রহণযোগ্য নয়’, ফেসবুকে সায়ান

প্রকাশ: ১৩ মে, ২০২৫

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানছবি: প্রথম আলো
ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানছবি: প্রথম আলো

অন্যায় অনিয়মে বরাবরই সোচ্চার থাকেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। গানে-কবিতায় প্রতিবাদী এক কণ্ঠস্বর তিনি। শুধু তা–ই নয়, রাজপথেও থাকেন সামনের সারিতে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সোচ্চার ছিলেন সায়ান। পরবর্তী সময়েও অন্যায় অবিচারে নিজের প্রতিবাদ থামিয়ে রাখেননি। এবার তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘৃণা এবং সহিংসতার চর্চা বন্ধে নিজের অবস্থান জানিয়ে কথা বলেছেন। ফেসবুকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিসরে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণাত্মক ভাষা, অপমানজনক উপাধি এবং হত্যার হুমকির মতো প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই শিল্পী।

গতকাল সোমবার দেওয়া ফেসবুক পোস্টে সায়ান বর্তমান সরকারকে ঘৃণা, সহিংসতা ও হত্যার হুমকির মতো বিষয়গুলো নিয়ে কঠোর হওয়ার জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা ঘৃণা চর্চার বয়ানকে চিহ্নিত করুন, আক্রমণাত্মক ভাষাভঙ্গি নিয়ে কাজ করুন। মানুষের জন্য মানবিক আচরণের ন্যূনতম একটা মানদণ্ড তৈরির কথা ভাবুন। বিভিন্ন মঞ্চে গিয়ে একে বেশ্যা, তাকে দালাল—এগুলো তো প্রতিদিনের ব্যাপার হয়েছে, তার সঙ্গে এই যে জবাই করার কথা বলা, “ধরে ধরে জবাই কর”, এটা পৃথিবীর যেকোনো সমাজে, যেকোনো রাষ্ট্রে কীভাবে গ্রহণযোগ্য? এভাবে ঘৃণার ও হত্যা হুমকির খুল্লামখুল্লা চর্চা চালিয়ে যাবে কেউ, আর তারপর সেটার কোনো পরিণতি হবে না, এটা কেন গ্রহণযোগ্য? এখানে তো ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা বলা হচ্ছে। এটা কীভাবে স্বাভাবিক? এটা স্লোগান হিসেবে কেন আপত্তিকর নয়? হত্যার উসকানি নয়?’

সায়ান তাঁর ফেসবুক পোস্টের এক জায়গায় লিখেছেন, এ ধরনের ভাষা তিনি ২০১৩ সালে শুনেছেন, যখন গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলছিল। তখনো এসব শুনে তাঁর আনন্দ হয়নি প্রাণে। শিহরিত হননি তিনি। সায়ান লিখেছেন, ‘বিচার চাওয়া আর জবাই করা এক ব্যাপার না। বিচারের সংস্কৃতিই সেটা নয়।’

সায়ানের মতে, ‘ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ এখন সময়ের দাবি—এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিল্পী বললেন, ‘সাধারণ জনতার ভিড়ে সুশীলও থাকেন, উন্মাদ মব-জনতাও থাকেন। তাঁদের কাছে কিছু আশা করি না বাড়তি। তাঁরা রাষ্ট্রের দায়িত্বে নাই। তাঁরা যে যাঁর নীতি-গতি-বিবেক অনুযায়ী আচরণ করবেন, সকলেরই দেশ, সকলেই স্বাধীন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিক থেকে তো একটা মানদণ্ড থাকতে হবে আচরণের। কেন একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে বেশ্যা ডেকে পার পাবেন? কেন যে কেউ যে কাউকে ভালো না লাগলেই জবাই করার হুমকি দেবেন এবং তার স্বাভাবিকীকরণ হবে? কেন বিভিন্ন মাহফিলে ঘৃণা ছড়ানোর বয়ান চলতে পারে যুগের পর যুগ, অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি? মেয়েদের প্রতি? তাই একটা “ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন” এখন সময়ের দাবি।’

সাম্প্রতিক এক উদাহরণ টেনে সায়ান লেখেন, ‘সেদিন দেখলাম কোনো এক মঞ্চ থেকে কেউ কেউ তালে তালে বলছেন, “একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জবাই কর।” রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা মানুষেরা কেন এই চর্চায় কোনো সমস্যা পাচ্ছেন না? মব-জনতা উন্মাদনায় ভেসে যাচ্ছে জংলিপনায়। কিন্তু রাষ্ট্রের নিযুক্ত সেবকেরা কী করে এখানে নির্বিকার থাকবেন? এগুলোকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে দেখতে চাই। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার করবেন আদালতে। জবাই করার স্লোগানের মধ্যে ২০১৩–তেও দেশপ্রেম ছিল না, এখনো নাই। বিচারের মানসিকতা ছিল না, এখনো নাই।’

পোস্টের শেষ দিকে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে সংস্কৃতি পাল্টাবে না। কাজ করতে হবে। প্রচারণা করতে হবে। এখানে মানুষ গালি দেওয়া এবং জবাই করার হুমকি দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব শেষ করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সরকারকে বলছি, কাউকে কেউ কিছু বললেই গায়েবি মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে যাইয়েন না। কোন কথাগুলো উগ্র-হিংসাত্মক ও আপত্তিকর, সেগুলোর তালিকা করেন। আইনিভাবে ঘৃণা চর্চাকে নিষিদ্ধ করেন। এটা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জটিল প্রক্রিয়ার চেয়ে কিছুটা সহজ হবে করা। ঘৃণা চর্চাকে খাটো করে দেখবেন না। সেখান থেকে বৈধতা আসে বড় বড় অপরাধের।’

Lading . . .