Advertisement
  • হোম
  • বাণিজ্য
  • ৩৮,০০০ ডলারের ব্যাগের উৎপাদন মূল্য ১,৪০০ ডলার, প্র...

৩৮,০০০ ডলারের ব্যাগের উৎপাদন মূল্য ১,৪০০ ডলার, প্রচারণা চালাচ্ছেন চীনের উৎপাদকেরা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাছবি: রয়টার্স
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে গুচি ব্র্যান্ডের বেল্ট বিক্রি হয় ৭০০ ডলারে। এই বেল্ট বানাতে খরচ হয় মাত্র ২০ ডলার। গুচির যে টি–শার্ট বাজারে বিক্রি হয় ৪০০ ডলারে, চীনে তার উৎপাদন মূল্য ২০ ডলার। আবার বার্কেনস্টক স্যান্ডেলের দাম পশ্চিমের দেশগুলোতে ১২০ ডলার। চীনের উৎপাদকেরা বলছেন, এর কারখানা মূল্য ২০ ডলারের নিচে।

আবার ৩৮ হাজার ডলারের ব্যাগের উৎপাদন মূল্য মাত্র ১ হাজার ৪০০ ডলার বলে
প্রচারণা চালাচ্ছেন চীনের উৎপাদকেরা। তাঁরা সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে এমন সব দামি ব্র্যান্ডের বেল্ট কেনার আহ্বান জানাচ্ছেন। শুধু বেল্ট নয়; আইফোন, বারকিনের ভ্যানিটি ব্যাগ, ডিওরের জুতা, লুলুমেলন লেগিংস—এসব দামি ব্র্যান্ডের উৎপাদন খরচ নিয়ে এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন চীনের উৎপাদকেরা। অবশ্য এসব প্রচারণায় প্রকাশ পাওয়া দামের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর মার্কিন বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশে বড় ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে চীনা উৎপাদকেরা টিকটকসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনব এমন প্রচারণায় নেমেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জেরে চীনের ব্যবসায়ীদের অবস্থা তথৈবচ। ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মার্কিন বাজারে এসব পণ্য বিক্রি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইলেকট্রনিকসসহ বেশ কিছু পণ্যে মোট মার্কিন শুল্কের হার ২৪৫ শতাংশ।

চীনারা উৎপাদন মূল্য ফাঁস করছেন!

চীনের উৎপাদকেরা টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নামীদামি পণ্যের কারখানা মূল্য ফাঁস করে দিচ্ছেন। মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে নতুন একটি বিষয় দেখছে বিশ্ববাসী। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডগুলোর উচ্চমূল্যের পণ্যের দাম বা উৎপাদন খরচ বাস্তবে কতটা, সে বিষয়টি বিশ্ববাসীর সামনে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন চীনের উৎপাদকেরা। যদিও এগুলোর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারপরও বাজারব্যবস্থা সম্পর্কে যাঁরা ধারণা রাখেন তাঁরা মনে করেন, চীনের উৎপাদকদের এই দাবির সত্যতা আছে, পুরোপুরি ভিত্তিহীন নয় এসব দাবি। খবর সিএনবিসি।


চীনা উৎপাদকেরা দাবি করছেন, বারকিনের লোগোসহ ভ্যানিটি ব্যাগ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩৮ হাজার ডলারে বিক্রি হয়। সেখানে চীনের যে উৎপাদক সেই ব্যাগটি বানাচ্ছেন, তিনি ১ হাজার ৪০০ ডলারে তা বিক্রির অফার দিচ্ছেন। ক্রেতাদের প্রতি তাঁর আহ্বান, ব্র্যান্ড বা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে না কিনে সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে কিনতে। সে ক্ষেত্রে দাম কম পড়বে ৩৬ হাজার ৬০০ ডলার। তাঁরা বলছেন, বারকিনের লোগো ছাড়া এসব ব্যাগ একই উপাদান দিয়ে তৈরি, অর্থাৎ লোগোযুক্ত ব্যাগ ও লোগোহীন ব্যাগের মধ্যে গুণগত পার্থক্য নেই। অর্থাৎ একটি পণ্যের যা বাজারমূল্য, তার ৯০ শতাংশই লোগোর মূল্য। ওই ব্র্যান্ডের লোগোর জন্য এই বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে।

এমন আরও উদাহরণ আছে। যেমন লুলুমেলন লেগিংস যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হয় ১০০ ডলারে; সেই একই জিনিস দাবি করে চীনের উৎপাদকেরা বলছেন, এর কারখানা মূল্য ১০ থেকে ১৫ ডলার। বার্কেনস্টক স্যান্ডেলের দাম পশ্চিমের দেশগুলোতে ১২০ ডলার। চীনের উৎপাদকেরা বলছেন, এর কারখানা মূল্য ২০ ডলারের নিচে।

একইভাবে ডিওরের এক জোড়া হিল জুতা পশ্চিমের বাজারে বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ ডলারে। চীনের এই টিকটকাররা বলছেন, এর কারখানা মূল্য ২০ ডলার। গুচির বেল্ট পশ্চিমের বাজারে ৭০০ ডলারে বিক্রি হয়। চীনে তার কারখানা মূল্য ২৫ ডলার। গুচির যে টি–শার্ট বাজারে বিক্রি হয় ৪০০ ডলারে, চীনে তার উৎপাদন মূল্য ২০ ডলার।
চীনের উৎপাদকেরা এসব শুধু উন্মোচনই করছেন না, বরং একই সঙ্গে তাঁরা সরাসরি কারখানা মূল্যে ওই সব পণ্যের ওইএম (অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার) ভার্সন বিক্রির জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস পর্যন্ত খুলেছেন।

চীনের এই কৌশল শুধু বাজারে হস্তক্ষেপ করাই নয়, বরং মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর ইকুইটির ওপর বড় আঘাত। তাদের রীতিমতো হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন চীনের এই উৎপাদকেরা। এটা নিঃসন্দেহে একুশ শতকের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক যুদ্ধ, যেখানে চীন সরাসরি মার্কিন ভোক্তা বাজারের পারসেপশন অব ভ্যালু বা মূল্য–সম্পর্কিত ধারণা ভেঙে দিচ্ছে।

কেন মানুষ ব্র্যান্ড খোঁজে

২০০-৩০০ ডলারের স্মার্টফোন দিয়ে বেশির ভাগ মানুষ কাজ সারতে পারেন, সেখানে অনেকেই হাজার ডলারের আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স কেনেন। আবার সুইজারল্যান্ডের পাটেক ফিলিপ ব্র্যান্ডের সবচেয়ে কম দামের হাতঘড়ির দামও ১২ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি; যদিও ১০০ ডলারের একটি জাপানি সিটিজেন বা ক্যাসিও ব্র্যান্ডের ঘড়ি দিয়েও একই কাজ সারা যায়। বিষয়টি হলো, একশ্রেণির মানুষ বিপুল অর্থের মালিক হলে তাঁরা তখন নিজেদের আলাদা শ্রেণি হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেন; সেই প্রবণতা থেকেই এ ধরনের অতি দামি ব্র্যান্ডের পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়। বারকিনের ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে কোনো পার্টিতে যাওয়া মানুষ নিশ্চিতভাবেই সমাজের উচ্চ শ্রেণিতে প্রবেশাধিকার পান। একই কারণে লুইস ভুইটন ব্র্যান্ডের হ্যান্ডব্যাগের দাম প্রায় ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

এ ছাড়া ব্র্যান্ডের পণ্যে মানুষ আস্থা পায়। মানুষ আশ্বস্ত হতে পারে, নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য সাধারণ পণ্যের চেয়ে গুণগতভাবে ভালো হবে।

প্রচারণা কতটা বিশ্বাসযোগ্য

অবশ্য চীনাদের এসব প্রচারণার সত্যতা কতটা, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। চীন যেমন বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি করে, তেমনি নকল পণ্যও উৎপাদন করে। দামি হ্যান্ডব্যাগ ও ঘড়ি, যেগুলো ইতালি বা সুইজারল্যান্ডে উৎপাদিত হয় বলে লেখা থাকে, সেগুলো আদতে কতটা চীনে উৎপাদিত হয়। এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনিভার্সিটি অব আর্টস লন্ডনের অধ্যাপক রেজিনা ফ্রেই সিএনএনকে বলেন, এর উত্তর পুরোপুরি হ্যাঁ-ও নয়, আবার পুরোপুরি না-ও নয়।

ধরা যাক, এসব বিলাস দ্রব্যের বড় অংশই চীন থেকে আসে। কিন্তু টিকটকের এসব বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পণ্য কিনলে নিরাপত্তা ও মানের নিশ্চয়তা কিন্তু মিলছে না বলে মন্তব্য করেন রেজিনা। সেই সঙ্গে এসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা ফেরত দেওয়া-নেওয়ার সুযোগ নেই।

এই প্রচারণার মধ্য দিয়ে আরেকটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সেটা হলো, চীন যে এ রকম বিলাসী পণ্য তৈরি করতে পারে, বিশ্ববাসীর মনে সেই ধারণা তৈরি করা। কারণ, চীন এত দিন মূলত কম দামি ও নকল পণ্য উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। এই প্রচারণার মধ্য দিয়ে চীন অনেকটা এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করছে।

Lading . . .