Advertisement

২৪ ঘণ্টাই পাশে থাকবে ‘অটোমামা’

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর, ২০২৪

স্বয়ংক্রিয় এই প্রোটোটাইপটি (প্রাথমিক নমুনা) তৈরি করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষার্থীছবি: সংগৃহীত
স্বয়ংক্রিয় এই প্রোটোটাইপটি (প্রাথমিক নমুনা) তৈরি করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষার্থীছবি: সংগৃহীত

‘যানে কোনো চালক নেই, তবে যাত্রী আছে। দিনে কিংবা রাতে ২৪ ঘণ্টাই নির্ধারিত গন্তব্যে যাত্রীকে পৌঁছে দেওয়া যাবে। পাহাড় কিংবা সমতলের খানাখন্দ সড়ক, কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’—এসব বিষয় মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে ‘অটোমামা’। স্বয়ংক্রিয় এই প্রোটোটাইপটি (প্রাথমিক নমুনা) তৈরি করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষার্থী। প্রাক্তন ও বর্তমান ১৬ জন শিক্ষার্থীর এ দলের নাম ‘সিনাবটিকস’। তাঁদের দাবি, অটোমামা দেশের সড়কে চলাচল করতে সক্ষম প্রথম ‘স্বয়ংক্রিয় যান’।

প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করেছেন শাবিপ্রবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. শহিদুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক হোসনে আরা। শিক্ষার্থীদের দলটির সঙ্গে কথা হয় ১৮ অক্টোবর। দলের কারিগরি সদস্য মির্জা নিহাল বলেন, ‘দেশের ৯টি স্থানের যানবাহনের ধরন ও সড়কের ধরন (পাহাড়ি ও সমতল) বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রথমেই একটি ডেটাসেট তৈরি করি। এর মাধ্যমে সড়কে চলাচলের সময় সামনে কী কী যানবাহন রয়েছে, তা শনাক্ত (ডিটেক্ট) করতে পারে অটোমামা। সড়কে এটি ১২ ক্যাটাগরির যানকে শনাক্ত করতে পারে। এ ছাড়া যানটি সড়ক বিভাজক, গাছপালা, সড়কে বিছানো খড়, প্রাণীসহ আরও ২২ ধরনের বস্তু শনাক্ত করতে পারে। এতে “স্বয়ংক্রিয়ভাবে” তৎক্ষণাৎ যানটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কোন দিকে এবং কত গতিতে গেলে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।’

জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানগুলোকে অটোমামা আগে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে, এ ছাড়া এটি ট্রাফিক সাইন ও রোড সাইন মেনে চলতেও সক্ষম—জানালেন নিহাল। দলের আরেক সদস্য আদ-দ্বীন মাহবুব বলেন, ‘যানটিতে ডেটাসেটের পাশাপাশি ক্যামেরা, মাইক্রোপ্রসেসর ও কন্ট্রোলার, অ্যাকারম্যান স্টিয়ারিং, বিএলডিসি মোটর, লিনিয়ার অ্যাকচুয়েটর ব্রেকিং সিস্টেম ও ৪৮ ভোল্টের পাওয়ার সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা অপরিকল্পিত। নাগরিকেরাও যথাযথভাবে ট্রাফিক নিয়ম মানে না। তাই অটোমামার ডেটাসেটটি ওই রকমভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যেন যানটি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

দলের আরেক সদস্য নাইনাইউ রাখাইন বলেন, ‘অটোমামাতে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। ইতিমধ্যে “লেভেল-২”–এর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে এটি একমুখী সড়কে (ওয়ান ওয়ে) চলতে সক্ষম। পরবর্তী ধাপে লেভেল-৩–এর কাজ শুরু করব। ধীরে ধীরে লেভেলের ফিচারগুলো দৃশ্যমান হবে।’

নাইনাইউ রাখাইন মনে করেন, বিমানবন্দর, কারখানা, সমুদ্রবন্দর বা ক্যাম্পাসগুলোতে প্রাথমিকভাবে এই যান ব্যবহার করা সম্ভব। তবে অটোমামার কারিগরি দিক নিয়ে কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরলেন দলের সদস্য ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত কোনো ওয়ার্কশপ বা গবেষণাগার পাইনি। আইআইসিটি ভবনের নিচতলার একটি করিডরে কাজ করতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এ ছাড়া তহবিল না থাকায় কাজের অগ্রগতিও হচ্ছে না।’

দলটির তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক শহিদুর রহমান বলেন, ‘তহবিলের ব্যবস্থা হলে শিক্ষার্থীরা আরও এগিয়ে যাবে। পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দেশের জন্য এটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

Lading . . .