Advertisement

২০০ বছরের বেশি পুরোনো এই হাটে অর্ধেক দামে মিলবে শাড়ি

প্রকাশ: ২৩ মে, ২০২৫

24obnd

প্রাচীনকালে টাঙ্গাইলের তাঁতিরা মসলিন শাড়ি তৈরি করতেন। সেই শাড়িরই উত্তরাধিকার হিসেবে আজও বেঁচে আছে টাঙ্গাইলের জামদানি আর বেনারসি। এসব শাড়ির চাহিদা এবং দেশ-বিদেশ থেকে ক্রেতাদের আগমন দেখে টাঙ্গাইলের করটিয়ার জমিদারেরা অষ্টাদশ শতাব্দীতে হাটের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন।

পন্নী পরিবারের সদস্য ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ওরফে চাঁদ মিয়া করটিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় একটি হাট প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে করটিয়া ছিল নদীবন্দর। কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে বসত হাট।

টাঙ্গাইল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরেই করটিয়া। সেখানকার হাট দেশের পুরোনো ও বড় কাপড়ের বাজার। প্রায় ৪৫ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে আছে এই হাট। হাজার হাজার ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করেন। সাধারণত সপ্তাহে দুই দিন বসে এই হাট। মঙ্গলবার ভোরে শুরু হয়ে চলে বুধবার রাত পর্যন্ত। আর বৃহস্পতিবার হয় খুচরা বেচাকেনা। এদিন খুচরা কাপড়ের সঙ্গে চলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বেচাকেনা।

দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারেরা এখান থেকে শাড়ি কিনে বিভিন্ন সুপার শপে খুচরা মূল্যে বিক্রি করেন। বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন শাড়ির পেজগুলোরও পাইকারি বাজার এই করটিয়া হাট। টাঙ্গাইল শাড়ির পাশাপাশি ছাপা শাড়িও পাওয়া যায়। টাঙ্গাইলের পাথরাইল, কালিহাতীর বল্লা, রামপুর, এনায়েতপুর, নরসিংদীর বাবুর হাট, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, ঢাকার ইসলামপুর প্রভৃতি জায়গা থেকে আসে এসব শাড়ি। হাটটির বিভিন্ন নকশাযুক্ত রঙিন শাড়ি শহরের মেগা শপিং মলেও দেখতে পাবেন।

পাইকারিতে এখানে অর্ধেক দামেও শাড়ি–কাপড় কেনা যায়। কিন্তু খুচরা বিক্রির সময় দাম বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলার তৈরি প্রিন্টের শাড়ি ছাড়াও থ্রি–পিস পাওয়া যায়। এ ছাড়া থান কাপড়, শার্ট, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, ছাপা কাপড়, গামছা, ওড়না, তোয়ালে ও লুঙ্গির বেচাকেনাও হয় চোখে পড়ার মতো। হাজারো ব্যবসায়ী ও ক্রেতার ঢল নামে এই হাটে। দেশের নানা প্রান্তের তৈরি পোশাক ন্যায্য মূল্যে বিক্রি হয় বলেই এই হাটের এত সুনাম।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ মিয়া বলেন, ‘১৫ বছর ধরে পাইকারি শাড়ি–কাপড় বিক্রি করি। করোনার সময় কাপড়ের ব্যবসা করতে পারি নাই। সুতার দাম বেশি, শ্রমিকদের মজুরি বেশি। আমরা কাপড়ের জাত ব্যবসায়ী। কাপড়ের ব্যবসা করে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।’

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী মোখলেছউদ্দিন বলেন, এই হাটে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আসেন পাইকারিতে কাপড় কিনতে। আগের মতো তেমন বেচাকেনা নাই। ১০-১৫ বছর আগে এই হাটে ক্রেতাদের সমাগম বেশি হতো, বেচাকেনাও ভালো হতো। সুতার দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার কারণে অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাপড়ের দামও বেড়েছে।

প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে করটিয়া হাটের শাড়ি–কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে টাঙ্গাইল শাড়ি দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করা হচ্ছে।

Lading . . .