Advertisement

বরফের তৈরি এই হোটেলে ঢুকেই মনে হলো, চাইলে কি না করতে পারে মানুষ

প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২৫

বরফ হোটেলে সস্ত্রীক লেখকছবি: লেখকের সৌজন্যে
বরফ হোটেলে সস্ত্রীক লেখকছবি: লেখকের সৌজন্যে

আমাদের শহর উমিয়া থেকে ইউকাসার্ভি প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। মাঝে ইয়োকমুক শহরে রাত্রিযাপন করে পরদিন সকালে পৌঁছালাম ইউকাসার্ভি। ছোট্ট গ্রামটা আর্কটিক সার্কেলের অত্যন্ত কাছে। শীতের সময় জায়গাটা হয়ে ওঠে বরফে মোড়া এক রূপকথার রাজ্য। নানা ধরনের শীতকালীন কর্মকাণ্ড ছাড়াও অরোরা বা নর্দার্ন লাইটস দেখার জন্যও বেশ সুপরিচিত এই অঞ্চল। তাই পর্যটকদেরও আনাগোনা বেশি।

এই গ্রামেই গড়ে তোলা হয়েছে আইস হোটেল। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে গেলে দারুণ স্থাপত্যশৈলীর বরফের স্থাপনাটিতে বরফের শিল্পকর্ম দর্শন ও বরফকক্ষে রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। আমরা অবশ্য দর্শনার্থী হিসেবে এসেছি। কারণ, এখানে রাত্রিযাপন ব্যয়বহুল। কক্ষভেদে বাংলাদেশি মুদ্রায় ভাড়া ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। রাত্রিযাপনের মনোবাসনাটা তাই মাটিচাপা দিয়েছি।

বরফ হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে ঢুকেই মনে হলো, চাইলে কি না করতে পারে মানুষ! ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখলাম। প্রবেশ টিকিট জনপ্রতি ৩১৫ ক্রোনা (প্রায় চার হাজার টাকা)। টিকিট হাতে নিয়ে প্রধান ফটকের দিকে এগোলাম। বিশাল বরফের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই লম্বা করিডর। বাঁয়ে চলে গেছে আরও কয়েকটি পথ। যেখানে দুপাশে বেশ কয়েকটি কক্ষ। একে একে কক্ষগুলোতে ঢুকলাম। শুরুর কক্ষগুলো তুলনামূলক ছোট। কারুকাজপূর্ণ শিল্পকর্মও কম। প্রতিটি কক্ষে বরফের তৈরি খাটের ওপর বল্গাহরিণের চামড়া বিছানো। সব কক্ষেই রাতে ঘুমানোর জন্য বিছানায় ঠান্ডা প্রতিরোধী ম্যাট্রেস আর বিশেষ স্লিপিং ব্যাগ দেওয়া আছে। তাই বাইরে তাপমাত্রা মাইনাস ১৫-২০ হলেও ভেতরটা বেশ আরামদায়ক।

সামনের করিডরে যেতেই পাওয়া গেল সারিবদ্ধ আরও কিছু কক্ষ। এদিকটার কক্ষগুলো মূলত শিল্প প্রদর্শনীর জন্য বানানো। কিছুটা প্রশস্ত এই কক্ষগুলো আলাদা আলাদা থিমে সাজানো। বরফ দিয়ে তৈরি পশুপাখি, মানুষ ছাড়াও নিখুঁত কারুকাজ করা নানা পৌরাণিক চরিত্রও চোখে পড়ল। দারুণ আলোকসজ্জা আর নেপথ্য সংগীত পুরো পরিবেশকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। হঠাৎ মনে হলো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিনির্ভর কোনো সিনেমার সেটে ঢুকে পড়েছি!

আরেকটু সামনে যেতেই বরফ দিয়ে দিয়ে তৈরি দারুণ মেরু ভালুকের শিল্পকর্ম চোখে পড়ল। পাশের কক্ষটিই হলরুম। যেখানে দেয়ালে বরফের তৈরি দারুণ নকশা শোভা পাচ্ছে। এই কক্ষে কয়েকটি বেঞ্চ পাতা, যেখানে ২৫ থেকে ৩০ জন বসতে পারবেন।

এ ঘরটি ঘুরে বের হয়ে আরেকটি ঘরে গেলাম। এখানে একটি বার ছাড়াও বেশ কয়েকটি কক্ষ থাকার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কক্ষগুলোও নানান থিমে সাজানো। এখানকার একজন কর্মী জানালেন, আইস হোটেল বরফের শিল্পকর্ম শেখানোর কর্মশালাও আয়োজন করে। এ ছাড়া অতিথিদের অরোরা অভিযান, ডগস্লেজিং, স্নোমোবাইল চালানোসহ সুইডেনের নানা রকম শীতকালীন অভিজ্ঞতার স্বাদ দিতেও প্যাকেজ অফার করে। তবে প্যাকেজ মূল্য দেখে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়!

ওই কর্মীর কাছে এই বরফ হোটেলের ইতিহাসও জানলাম। ১৯৮৯ সালে পাশের তোর্নে নদীকে কেন্দ্র করে হোটেলের যাত্রা। প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে নদীর পানি জমে যখন বরফ হয়ে যায়, তখন বরফ কেটে স্লাইস করেই আইস হোটেল ও ভেতরের সব অসাধারণ শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়। বসন্তের শেষে সবকিছু গলে প্রকৃতিতে মিশে যায়। প্রতিবছর আবার নতুন করে গড়ে তোলা হয় এই হোটেল।

Lading . . .