নেত্রকোনায় ৮ মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি ধর্ষণ মামলার আসামি, উল্টো বাদীকে হুমকি
প্রকাশ: ৫ মে, ২০২৫
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় স্কুলছাত্রীকে (১৫) ধর্ষণের অভিযোগে মো. শাহিন আলম (২২) নামে এক তরুণের বিরুদ্ধে মামলা হয় আট মাস আগে। দীর্ঘ সময়েও ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযুক্ত শাহিন ও তাঁর স্বজনেরা মামলা তুলে নিতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এ নিয়ে ওই ছাত্রীর বাবা গতকাল রোববার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আজ সোমবার সকালে জেলা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের তিনি বিষয়টি জানান। মামলার আসামি শাহিন মিয়া দুর্গাপুরের বাকলজোড়া ইউনিয়নের সালুয়াকান্দা গ্রামের সেকুল মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা, মামলার এজাহার ও বাদীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর বাবা ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে থাকেন। ছুটি পেলে কলমাকান্দা উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। তাঁর মেয়ে ২০২৪ সালে ভালুকা সদরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ওই বছরের ৩০ মে তিনি কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে পরিবারসহ বাড়িতে আসেন। তাঁর প্রতিবেশী এক ব্যক্তির বাড়িতে আত্মীয়–সম্পর্কিত শাহিন আলমও দুর্গাপুর থেকে বেড়াতে আসেন। ওই দিন রাতে শাহিন মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। এর আগেও শাহিন মেয়েটিকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতেন। ঘটনার পর মেয়েটি আত্মহত্যা করতে চাইলে পরিবারের লোকজন বাধা দেয়। তাকে উদ্ধার করে সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অন্তত এক মাস চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয় দিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়। ঘটনার পর থেকে মেয়েটি কথা বলা বন্ধ করে দেয়। সার্বিক বিষয় নিয়ে মেয়েটির বাবা গত ২৩ আগস্ট নেত্রকোনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে শাহিনকে আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু এখনো পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ওই ছাত্রীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়েটি ওই ঘটনার পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সে এক মাস এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ছয় দিন আইসিসিইউতে ভর্তি ছিল। সে এখন কোনো কথা বলতে পারে না। লিখে বা ইশারা-ইঙ্গিতে দেখায়। আদালতে বিচারকের কাছেও সে লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। এত দিন চলে গেলেও পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি।’
মেয়েটির মামা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ আসামি শাহিনকে গ্রেপ্তার না করায় তাঁর চাচা রমজান মিয়াসহ স্বজনেরা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আমার বোনজামাইসহ পরিবারের সদস্যদের দফায় দফায় হুমকি দিয়েছে। আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরার কারণে তাঁরা নিজেদের জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানালেও কাজ হচ্ছে না।’
অভিযোগের বিষয়ে শাহিন মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান বলেন, ‘আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ বাদীকে নিরাপত্তা দিতে দুর্গাপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হুমকির বিষয়ে বাদীকে থানায় জিডি করতে বলা হয়েছে।’ ওসি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।’