Advertisement

‘নাগরিক সেবা’ এক ঠিকানায় সব সেবা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

‘নাগরিক সেবা’ এক ঠিকানায় সব সেবা
‘নাগরিক সেবা’ এক ঠিকানায় সব সেবা

ঢাকা: এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের উদ্যোগে আসছে নতুন সেবা আউটলেট ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’, যার সংক্ষেপিত রূপ ‘নাগরিক সেবা’।

সেবাদাতা হিসেবে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা আবেদন করতে পারবেন ১ মে থেকেই। চলমান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগ্রহী উদ্যোক্তাদের www.nagoriksheba.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনের অনুরোধ করা হয়েছে।

এর মাধ্যমে সরকারি সেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগ হিসেবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা, যা নাগরিক সেবা কেন্দ্রে এখনই দেওয়া যাবে, তার তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুরুতে প্রায় ১০০টি সেবা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ন্যাশনাল ইন্টার-অপারেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক এবং ডেটা গভর্ন্যান্স কাঠামো গঠন ও কার্যকরের পাশাপাশি ডিজিটাল রূপান্তরে গতি বাড়াবে এই উদ্যোগ।

একই সঙ্গে সেবা সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে 'নাগরিক সেবা' কেন্দ্র পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের সব শহর, সব গ্রাম এবং ওয়ার্ডে।

'নাগরিক সেবা' কেন্দ্রে আবেদনের পরে নাগরিককে আর 'প্রিন্টেড পেপার' নিয়ে কোনো সরকারি বা আধাসরকারি অফিসে যেতে হবে না। বরং সেবা কেন্দ্রের সাইট থেকে অনলাইনে জমা দেওয়া আবেদন সরাসরি ট্র্যাকিং নাম্বারসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে পৌঁছে যাবে। এর পেছনে কাজ করবে একটি শক্তিশালী ও নিরাপদ সার্ভিস বাস। ন্যাশনাল সার্ভিস বাস মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটি নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ডেটা গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইন্টার-অপারেবিলিটি অথরিটি তথ্য লেনদেনের মান, উপযোগিতা, গোপনীয়তা এবং সাইবার সিকিউরিটি দেখভাল করবে।

‘নাগরিক সেবা’ ইউজার ইন্টারফেস হিসেবে একটি সিঙ্গেল সার্ভিস পোর্টাল বা ওয়েবসাইট তৈরি হবে এবং সঙ্গে থাকবে সুপার অ্যাপ। এই পোর্টাল ও অ্যাপে থাকবে সকল সেবার একক গেটওয়ে, বিলিং অ্যাগ্রিগেটর এবং পেমেন্ট গেটওয়ে, বলেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

তিনি জানান, 'নাগরিক সেবা' কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের জন্য থাকবে নির্ধারিত ব্র্যান্ডিং, ইউনিফর্ম, পরিচয় শনাক্তকারী কার্ড এবং সরকার প্রদত্ত সনদ।

সরকার ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চগতি ও মানসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবার জন্য নির্দেশনা দেবে। থাকবে নির্দিষ্ট মূল্য পরিকল্পনা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও যাচাই-বাছাই পরীক্ষায় নির্বাচিত উদ্যোক্তাদের জন্য অন্তত চারটি কম্পিউটার, ফার্নিচার, ব্র্যান্ডিং অনুযায়ী দোকান সাজানোসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনে সহনীয় সুদের অর্থায়নের জন্য বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

প্রাথমিকভাবে 'নাগরিক সেবা' কেন্দ্র উদ্বুদ্ধ ও বিনিয়োগ সহজ করতে সরকারি, আধাসরকারি অফিস, পোস্ট অফিস, বিটিসিএল অফিস ইত্যাদিতে কো-ওয়ার্কিং স্পেস তৈরির চিন্তা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার জনসেবামুখী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে এই যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এটি একটি নতুন প্রজন্মের সরকারি সেবা প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব জায়গার মানুষ সহজেই সরকারি অফিসে না গিয়েও বিভিন্ন সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

বাংলাদেশে এখনও অনেক নাগরিকের কাছে ডিজিটাল ডিভাইস নেই, যাদের পক্ষে অনলাইনে সেবা নেওয়া সম্ভব নয়, তাদের জন্য 'নাগরিক সেবা' একটি কার্যকর বিকল্প হবে।

এই উদ্যোগের আওতায় থাকছে-
• নাগরিক পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত আবেদন

• পরিচয়পত্র সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ

• ভূমি সংক্রান্ত তথ্য ও আবেদন, সিঙ্গেল ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়ে

• নতুন পাসপোর্টের আবেদন, পাসপোর্ট নবায়ন

• অনলাইন জিডি

• আয়কর রিটার্ন আবেদন

• ভ্যাট চালান জমাদান আবেদন

• ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেড মার্ক আবেদন

• বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ও অনুদানের আবেদন

• বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ সকল ইউটিলিটি

• ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন

• শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি সেবা

• অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সেবা।

প্রধান উপদেষ্টার মতে, এই উদ্যোগ শুধু সেবা গ্রহণকে সহজ করবে না, বরং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং উদ্যোক্তাদের জন্য লাভজনক সামাজিক ব্যবসার সুযোগ এনে দেবে।

শুরুতে দোকান বা কিয়স্কের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হবে, পরে যে কেউ ঘরে বসেই এজেন্ট-শিপ নিয়ে ডিজিটাল নাগরিক সেবা প্রদান করতে পারবে। এই পর্যায়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের 'ভিলেজ ফোন লেডি' ধারণাটি 'সিটিজেন সার্ভিস পারসন' বা 'সিটিজেন সার্ভিস লেডি' হিসেবে রূপান্তরিত হবে।

উদ্যোক্তাদের জন্য আহ্বান
দেশের যেকোনো এলাকার আগ্রহী উদ্যোক্তারা খুব সহজেই 'নাগরিক সেবা' এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। এর জন্য নাগরিক সেবা ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ করলেই হবে। আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত, সহজ ও সম্পূর্ণ ডিজিটাল।

এটি শুধু একটি সেবা নয়— এটি একটি জনমুখী আন্দোলন, যার লক্ষ্য হলো সরকারি সেবাকে অফিস থেকে বের করে আরও সহজ, দ্রুত এবং হয়রানিমুক্ত করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

এমইউএম/এসআইএস

Lading . . .